হযরত আদম (আঃ) এর সৃষ্টি এবং শয়তানের অবাধ্যতার কাহিনী !
আল্লাহ ছাড়া আর কোন সৃষ্টিকর্তা নেই ।
হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল ।
হযরত আদম (আঃ) হলেন মানব জাতির পিতা ।
উনাকে আল্লাহতায়ালা প্রথম সৃষ্টি করেন । তারপর
উনার সঙ্গী মা হওয়া (আঃ) কে সৃষ্টি করেন ।
কুরআন ও হাদীসে আদম (আঃ) এর
সৃষ্টি সম্পর্কে আমরা অনেক কিছু জানতে পারি ।
আবু আশআরী (রাঃ) বলেন, রাসূলূল্লাহ (সাঃ)
বলেছেনঃ আল্লাহ তায়ালা আদম (আঃ)
কে পৃথিবী থেকে সংগৃহীত এক
মুঠো মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেন । তাই
মাটি অনুপাতে আদম সন্তানদের কেউ হয় সাদা, কেউ
হয় গৈারবর্ণ, কেউ হয় কালো, কেউ হয়
মাঝামাঝি । ঈষৎ শাব্দিক পার্থক্যসহ তিনি ভিন্ন
সূত্রে উক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেছেন । সুদ্দী (রঃ)
ইবন আব্বাস ও ইবন মাসউদ (রা) সহ কতিপয়
সাহাবা সূত্রে বর্ণনা করেন যে,
তারা বলেনঃ আল্লাহতায়ালা কিছু
কাদামাটি নেয়ার জন্য জিব্রাঈল (আ)
কে যমীনে প্রেরণ করেন ।
তিনি এসে মাটি নিতে চাইলে যমীন বলল,
তুমি আমার অঙ্গ হানি করবে বা আমাতে খুত
সৃষ্টি করবে ; এ ব্যাপারে তোমার নিকট
থেকে আমি আল্লাহর কাছে পানাহ চাই ।
ফলে জীব্রাঈল (আঃ)
মাটি না নিয়ে ফিরে গিয়ে বললেন, হে আমার রব !
যমীন তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করায়
আমি তাকে ছেড়ে এসেছি । এবার
আল্লাহতায়ালা মীকাঈল (আ) কে প্রেরণ করেন ।
যমীন তার নিকট থেকেও আশ্রয়
প্রার্থনা করে বসে । তাই তিনিও
ফিরে গিয়ে জিব্রাঈল (আ) এর মতই বণনা দেন ।
এবার আল্লাহতায়ালা মালাকুল মউত বা আযরাঈল (আ)
কে প্রেরণ করেন । যমীন তার কাছ থেকেও আশ্রয়
প্রার্থনা করলে তিনি বললেন, আর আমিও আল্লাহর
আদেশ বাস্তবায়ন না করে শূন্য
হাতে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে তার পানাহ চাই ।
এ কথা বলে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন স্হান
থেকে সাদা, লাল ও কালো রঙের কিছু মাটি সংগ্রহ
করে মিশিয়ে নিয়ে চলে যান । এ কারণেই আদম
(আঃ) এর সন্তানদের এক একজনের রঙ এক এক রকম
হয়ে থাকে । আজরাঈল (আঃ) মাটি নিয়ে উপস্হিত
হলে আল্লাহতায়ালা মাটি গুলো ভিজিয়ে নেন ।
এতে তা আঠালো হয়ে যায় । তারপর
আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেনঃ “কাদা মাটি দ্বারা আমি মানুষ
সৃষ্টি করতে যাচ্ছি । যখন আমি তাকে সুঠাম করব
এবং তাতে আমার রুহ সন্চার করব ; তখন
তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হয়ো । “(১৫/২৮)
তারপর আল্লাহতায়ালা আদম (আঃ) কে নিজ
কুদরতি হাতে সৃষ্টি করেন যাতে ইবলিশ অহংকার
করতে না পারে । তারপর মাটির তৈরী এ মানব
দেহটি আল্লাহ চল্লিশ দিন রূহ প্রদান ব্যতীত
ফেলে রাখে । তখন এই দেহটির প্রতি লক্ষ্য
করে ফেরেশ্তারা এবং ইবলিশ ঘুরাঘুরি করত । আর
আল্লাহর সৃস্টিকে বুঝার চেষ্টা করত । ইবলিশ আদম
(আঃ) এর প্রাণহীন দেহটিকে আঘাত করলে তা ঠন
ঠন আওয়াজ করে । সে দেহটির চারপাশে ঘুরে বলত ,
তুমি একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি হয়েছ । এরপর
তার মধ্যে রূহ সন্চার করার সময়
এলে আল্লাহতায়ালা বললেনঃ আমি যখন এর
মধ্যে রুহ সন্চার করব, তখন এর প্রতি সেজদাবনত
হয়ো । যথাসময়ে আল্লাহতায়ালা আদম (আঃ) এর
দেহে রুহ সন্চার করেন , তখন রুহ তার মাথার
মধ্যে প্রবেশ করে এবং তিনি হাচি দেন ।
ফেরেশ্তারা বললেন, আপনি আল-হামদুলিল্লাহ বলুন
। আদম (আঃ) আল-হামদু লিল্লাহ বললেন ।
জবাবে আল্লাহতায়ালা বললেন, তোমার রব
তোমাকে রহম করুন । তারপর উনার
দৃস্টি জান্নাতের ফল-ফলাদির দিকে গেল ।
তিনি উনার পেটে ক্ষুধা অনুভব করলেন এবং ফল-
ফলাদি খাওয়ার আকাংখা মনে আসল
এবং তা সেগুলো পাওয়ার জন্য
তাড়াতাড়ি করে ছুটে যান । এ কারণেই
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মানুষ সৃষ্টিগতভাবেই
ত্বরাপ্রবণ ‘ (২১/৩৭)
সূরা সাদে আল্লাহতায়ালা বলেন, ” স্বরণ কর,
তোমার প্রতিপালক ফেরেশ্তাদেরকে বলেছিলেন,
আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি কাদা মাটি থেকে । যখন
আমি তাকে সুষম করব এবং তাতে আমার রূহ সন্চার
করব, তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হয়ে ।
তখন ফেরেশ্তারা সকলেই সিজদাবনত হলো – কেবল
ইবলিশ ব্যতীত । সে অহংকার করল এবং কাফিরদের
অর্ন্তভুক্ত হলো । তিনি বললেন, হে ইবলিশ !
আমি যাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করলাম , তার
প্রতি সিজদাবনত হতে তোমাকে কিসে বাধা দিল ?
তুমি কি উদ্ধত প্রকাশ করলে না কি তুমি উচ্চ
মর্যাদাসম্পন্ন ? সে বলল, আমি তার চাইতে শ্রেষ্ঠ
। আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন
এবং তাকে সৃস্টি করেছেন কাদামাটি থেকে ।
তিনি বললেন, তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও ।
নিশ্চয়ই তুমি বিতাড়িত এবং তোমার উপর আমার
লা’নৎ স্হায়ী হবে কর্মফল দিবস পর্যন্ত ।
সে বলল, আমার প্রতিপালক ! আপনি আমাকে অবকাশ
দিন পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত । তিনি বললেন,
তুমি অবকাশ প্রাপ্তদের অর্ন্তভুক্ত হলে – অবধারিত
সময় উপস্হিত হওয়ার দিন পর্যন্ত । সে বলল-
আপনার ক্ষমতার শপথ ! আমি তাদের সকলকেই
পথভ্রষ্ট করব । তবে তাদের মধ্যে আপনার একনিষ্ঠ
বান্দাদেরকে নয় । আর তিনি বললেন, তবে এটাই
সত্য – আর আমি সত্যই বলি – তোমার দ্বারা আর
তোমার অনুসারীদের দ্বারা আমি জাহান্নাম পূর্ণ
করবই । (৭১-৮৫)
সূরা আরাফে আল্লাহতায়ালা বললেন, “সে বলল,
আপনি আমাকে উদভ্রান্ত করলেন , এজন্য আমিও
তোমার সরল পথে নিশ্চয়ই ওৎ পেতে বসে থাকব ।
তারপর আমি তাদের নিকট আসবই সম্মুখ, পশ্চাৎ,
দক্ষিণ এবং বাম দিক থেকে এবং তুমি তাদের
অধিকাংশকে কৃতজ্ঞরূপে পাবে না ।” সুদ্দী আবু
সালিহ ও আবু মালিকের সূত্রে ইবন আব্বাস (রাঃ)
থেকে এবং মুররা এর সূত্রে ইবন মাসউদ (রাঃ) ও
কতিপয় সাহাবা থেকে বর্ণনা করেন যে,
তারা বলেনঃ আল্লাহতায়ালা ইবলিশকে জান্নাত
থেকে বের করে দেন । আদম (আঃ) তথায় নিঃসঙ্গ
একাকী ঘুরে বেড়াতে থাকেন । এখানে তার
স্ত্রী নেই যার কাছে গিয়ে একটু শান্তি লাভ
করা যায় । এক সময় তিনি ঘুমিয়ে পড়েন । জাগ্রত
হয়ে দেখতে পেলেন যে, তার শিয়রে একজন
নারী উপবিষ্ট রয়েছেন ।
আল্লাহতায়ালা তাকে আদম (আঃ) এর পাজরের হাড়
থেকে সৃষ্টি করেন । তাকে দেখে আদম (আঃ)
জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কে ?
তিনি বললেনঃ আমি একজন নারী । আদম (আঃ)
বললেন, তোমাকে কেন সৃষ্টি করা হয়েছে ?
জবাবে তিনি বললেন, যাতে আপনি আমার
কাছে শান্তি পান । তখন ফেরেশ্তাগন আদম (আঃ)
এর জ্ঞান যাচাই করার জন্য জিজ্ঞাসা কররেন,
হে আদম ! উনার নাম কি বলুন তো ! আদম আঃ বললেন,
হাওয়া । আবার তারা জিজ্ঞাসা করলেন,
আচ্ছা হাওয়া নাম হলো কেন ? আদম (আঃ) বললেন,
কারণ তাকে ‘হাই’ (জীবন্ত সত্তা)
থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে । এ
প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, “হে মানব জাতি !
তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর,
যিনি তোমাদেরকে এক
ব্যাক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও
যিনি তা হতে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেন
এবং তাদের দুজন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দেন
।” (৪/১) সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত
আছে যে, আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলূল্লাহ
(সাঃ) বলেছেনঃ ‘মহিলাদের
ব্যাপারে তোমরা আমার সদুপদেশ গ্রহণ কর ।
কেননা, নারীদেরকে পাজরের হাড়
থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে । আর পাজরের উপরের
অংশটুকুই সর্বাধিক বাকা ।
যদি তুমি তা সোজা করতে যাও
তাহলে ভেঙ্গে ফেলবে এবং আপন অবস্হায়
ছেড়ে দিলে তা বাকাই থেকে যাবে । অতএব,
মহিলাদের ব্যাপারে তোমরা আমার সদুপদেশ গ্রহণ
কর ” সূত্রঃ আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া । আবুল
ফিদা হাফিজ ইবন কাসির আদ-দামেশ্কী (র)।